বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন
রুহুল আমীন খন্দকার- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতিকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব নিয়মিত ভাবে সফলতার সহিত জঙ্গী, সস্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, অস্ত্রধারী অপরাধী, ভেজাল পণ্য, ছিনতাইকারী, পর্নোগ্রাফি, প্রতারক চক্র, হ্যাকার, ছিনতাইকারী, কালোবাজারী, আন্তঃজেলা চোর চক্র’সহ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত প্রতারণামূলক ভাবে মহাসড়কের জমি ক্রয়-বিক্রয়সহ ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক ও হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি গোলাম ফারুক ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের দাবি, গোলাম ফারুক হচ্ছে একজন মহাপ্রতারক। তার নামে অন্তত ৮-টি মামলা রয়েছে। তিনি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রথমে এলসি খোলার নামে ৭ কোটি টাকা নিয়েছেন এবং পরবর্তীতে মহাসড়কের জমি মর্টগেজ রেখে ওই একই ব্যাংক থেকে আরও ১৫ কোটি ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। আজ শুক্রবার ১৫ই এপ্রিল দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
খন্দকার আল মঈন বলেন- জমিজমার বিরোধ নিয়ে সম্প্রতি র্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একটি হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই মহা প্রতারণার বিষয়টি উঠে আসে। একই ব্যক্তি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি এবং মহাপ্রতারক। গত ২৬শে মার্চ ও ৬ই এপ্রিল দুই দফায় জমির প্রকৃত মালিককে হত্যাচেষ্টা চালায় এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা। গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে গোলাম ফারুক ও তার সহযোগী ফিরোজ আল মামুনকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানীর বাড্ডায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। এছাড়াও মহাসড়কের জমি ক্রয়-বিক্রয় করে প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারিত করার বিষয় ও বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
২০২১ইং সালের এপ্রিলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মহাসড়কের জমি ব্যক্তি নামে নিবন্ধন, বিক্রয়, ব্যাংকে বন্ধক ও ব্যাংক কর্তৃক নিলামে বিক্রি চেষ্টার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। এই ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও উঠে আসে- একটি প্রতারক চক্র মহাসড়ক শ্রেণিভুক্ত সরকারি জমি কয়েকটি সরকারি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে সরকারি ভুমি ব্যক্তি মালিকানায় নিবন্ধন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নেয়। যদিও এ সব জমি সড়ক ও জনপদ অধিদফতর এল.এ কেস ১৩-১৯৪৮/৪৯ সালের মূলে ও পুনরায় ৬৬-১৯৫৭/৫৮ সালের মূলে অধিগ্রহণ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত গোলাম ফারুক জানায় যে, সে ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসেবে তার ব্যবসা শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কোনো বন্ধকি সম্পত্তি ব্যতিত এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি শুরু করে।
বিদেশি ব্যাংকের টাকার পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় বর্ণিত বেসরকারি ব্যাংকটি আমদানিকৃত গাড়ি বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাকে ৭ কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে সে সরকারি জমিকে অসদুপায়ে ব্যক্তি নামে নিবন্ধন করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ১৯৪৮ইং সালে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ হওয়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের অধিগ্রহণ হওয়ার পূর্বের জমির মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করে। জালিয়াতির সাহায্যে সে ২০০৬ইং সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভুয়া দলিল তৈরি করে।
পরে ওই দলিলমূলে তৎকালীন মালিকের ছেলের কাছ থেকে গ্রেফতারকৃত গোলাম ফারুক তার স্ত্রীর নামে ২০১০ইং সালে নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে আরেকটি দলিল তৈরি করে। একই বছরে তার স্ত্রী থেকে ওই জমি নিজের নামে দলিল করে নেয়। যার সাব কবলা দলিল নম্বর ৮৮৮০।
পরবর্তীতে উক্ত জমি ওই বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে সে ব্যাংক থেকে আরও ১৫ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ইং সালে ব্যাংক বন্ধকি জমি নিলামে বিক্রয় করার নোটিশ জারি করে। ব্যাংক সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পায় ওই জমিটি সরকারি সম্পত্তি।
গ্রেফতারকৃত গোলাম ফারুক এর বিরুদ্ধে জমি জমা সংক্রান্ত, প্রতারণা, হত্যা চেষ্টা, এনআই অ্যাক্ট, জালিয়াতি ইত্যাদি অপরাধে রাজউকের একটি, একটি বেসরকারি ব্যাংকের চারটি ও পাবলিক বাদী হয়ে তিনটিসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার ফিরোজ আল মামুন ওরফে ফিরোজ গোলাম ফারুকের সকল অপকর্মের অন্যতম সহযোগী। সে উত্তরা এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ বিস্তারে কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।